এতগুলো ধর্মের মধ্যে,স্রষ্টার মনোনীত ধর্ম কোনটি?

কোর’আন কি বলে?

ইসলামের মৌলিক বাণীই হল সম্প্রীতি। পৃথিবীতে ইসলামই একমাত্র ধর্ম যেখানে মানবতার কল্যাণ করাকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, তোমরা শ্রেষ্ঠ উম্মত মানবজাতির কল্যাণের জন্য তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে (সূরা আল ইমরান ৩ঃ১১০)।

ইসলাম আল্লাহর কাছে একমাত্র গ্রহণযোগ্য দ্বীন। ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম বা জীবন ব্যবস্থা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। এ ব্যাপারে আল-কোরআনের ঘোষণা: ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর মনোনীত ধর্ম হচ্ছে ইসলাম’ (সূরা আলে ইমরান ৩ঃ১৯)। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার জন্য সামাজিক সম্পর্ক নিশ্চিত করাই এর মূল লক্ষ্য।

ইসলাম সত্যের ধর্ম, ইসলাম আবার সহিষ্ণুতারও ধর্ম। ইসলাম চায় মানুষ তাকে গ্রহণ করুক, তাকে অনুসরণ করুক; কিন্তু এর জন্য ইসলাম যুক্তি-বুদ্ধির আশ্রয় নেয়।

ধর্ম গ্রহণে জোর-জবরদস্তি নিষিদ্ধ

কোনো ধরনের জোর-জবরদস্তি ইসলাম প্রশ্রয় দেয় না। কেননা মানুষের কাছে সত্য, মিথ্যা, ন্যায় ও অন্যায়ের হেদায়াত এবং গোমরাহির বিষয়টি সুস্পষ্টরূপে তুলে ধরা ছিল নবী-রাসূলদের দায়িত্ব। যেমন আল্লাহ বলেন, মুমিন হয়ে যাওয়ার জন্য কি তুমি লোকদের বাধ্য করবে?’ (সূরা ইউনুস ১১ঃ৯৯)।

ইসলামে এ সুযোগ নেই। ইসলামের দৃষ্টিতে সত্য-মিথ্যা স্পষ্ট। এখন যার ইচ্ছা সত্য গ্রহণ করবে, যার ইচ্ছা মিথ্যাকে আঁকড়ে থাকবে। এখানে চাপাচাপির কিছু নেই। পবিত্র কোরআনের ভাষায় দীনের ব্যাপারে কোনো জবরদস্তি বা বাধ্যবাধকতা নেই। ইসলাম নীতিগতভাবেই ধর্মীয় সম্প্রীতির প্রবক্তা। ধর্মীয় সহনশীলতা ইসলামের অন্যতম শিক্ষা।

আর ধর্মীয় সহনশীলতা ছেড়ে চাপ প্রয়োগ করে ধর্ম পরিবর্তন করা এক বড় ধরনের ফিতনা। ‘ফিতনা হচ্ছে হত্যার চেয়েও মারাত্মক’ (সূরা বাকারা ২ঃ১৯১)।

গালমন্দ করা যাবে না

বিশ্বাস মানুষের অন্তরের বিষয়; কর্মে তা কখনও প্রকাশ পায় আবার কখনও প্রকাশ পায় না। বিশ্বাস গড়ে ওঠে জ্ঞানের আলোয়; বিশ্বাস চাপিয়ে দেয়া যায় না। এ জন্যই যার যার বিশ্বাস তার তার; তাই কারও বিশ্বাস নিয়ে বিদ্রূপ, কটূক্তি বা কটাক্ষ করা ইসলামে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ; গালমন্দ ইসলামে হারাম। আমরা সবাই জানি ইসলাম বিশুদ্ধ তাওহিদের ধারক। তাওহিদবিরোধী ভাবধারার সঙ্গে ইসলামের কোনো আপস নেই।

মূর্তিপূজা ইসলামের দৃষ্টিতে অত্যন্ত গর্হিত কাজ। কোনো দেবদেবীর উপাসনা-আরাধনা তো দূরের কথা, সেসবের অস্তিত্বও ইসলাম স্বীকার করে না; অথচ সে ইসলামই আবার অন্য ধর্মের উপাস্য বা দেবদেবীকে গালাগাল বা নিন্দা করতে নিষেধ করেছে। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহকে বাদ দিয়ে তারা যেসব উপাস্যকে ডাকে, তোমরা তাদের গালি দিও না (সূরা আনআম ৬ঃ১০৮)। এ থেকেই স্পষ্ট যে, ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষা করা ইসলামে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় কর্তব্য আর কর্তব্য পালন করা প্রতিটি মুসলমানের দায়িত্ব।

বিতর্ক নয় উত্তম ব্যবহারের আদেশ

ইসলাম মানুষকে জাতি ও বর্ণ দিয়ে বিচার করে না; বরং তার বিশ্বাস ও কর্মের মূল্যায়ন করে। তাই কোনো ধরনের বিতর্ক ইসলাম সমর্থন করে না। ইসলামের ব্যাপক প্রচার-প্রসার, দাওয়াতদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে দাওয়াতদানের পন্থা হতে হবে সুন্দর ও উত্তম। পবিত্র কোরআনের ভাষায় সুন্দর ও উত্তম পন্থা ছাড়া আহলে কিতাবের সঙ্গে বিতর্ক করো না’ (সূরা আনকাবুত ২৯ঃ৪৬)। যারা ধর্মীয় কারণে মুসলমানদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ শত্র“তামূলক আচরণ করে না, তাদের সঙ্গে সদাচরণ করা, ইসলামের শিক্ষা।

‘যারা দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করেনি, তোমাদের বাড়িঘর থেকেও তোমাদের বের করে দেয়নি, তাদের সঙ্গে সদাচরণ ও ইনসাফ করতে আল্লাহ তোমাদের বারণ করেন না।

মানবীয় ভ্রাতৃত্ব রক্ষার গুরুত্ব

বিশ্বময় চিরস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ইসলাম মানবভ্রাতৃত্ব তথা বিশ্বভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায়। ইসলাম মানবীয় ভ্রাতৃত্বের এমন এক অনুপম ধারণা পেশ করেছে যা অতুলনীয়। ইসলামের দৃষ্টিতে সমগ্র মানব জাতির মূল এক; একই পুরুষ ও নারী থেকে উদ্ভূত হয়েছে। কালক্রমে গড়ে উঠেছে গোত্রীয়, জাতিগত, বর্ণগত পার্থক্য। এসব ব্যবধান ও পার্থক্য কোনো শ্রেষ্ঠত্বের বা নিকৃষ্টত্বের মানদণ্ড হতে পারে না। এসব পার্থক্যের মূল উদ্দেশ্য পরস্পর পরিচিতির সুবিধা।

আল-কোরআনের ভাষায় ‘হে মানুষ, আমি তোমাদের এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তেমাদের বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিত হতে পার। নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে সেই সর্বাধিক সম্মানিত যে সর্বাধিক মুত্তাকি (সূরা হুজুরাত ৪৯ঃ১৩)। বস্তুত ইসলাম সার্বজনীন মানবীয় ভ্রাতৃত্বের প্রবক্তা। মানুষের প্রতি দয়া-অনুগ্রহ না করলে আল্লাহর অনুগ্রহ পাওয়াও কঠিন হয়ে পড়বে।

এ ব্যাপারে হাদিসে সুস্পষ্ট বক্তব্য রয়েছে- ‘হজরত জারির ইব্ন আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা সেই ব্যক্তির ওপর অনুগ্রহ করেন না যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া করে না (সহিহ মুসলিম)।

মানুষের সঙ্গে সম্প্রীতি গড়ে তোলা

মানুষের ভেতরে সব ধর্মের লোকই অন্তর্ভুক্ত। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবার প্রতি দয়া অনুগ্রহের কথা বলা মানেই হল ধর্মীয় সম্প্রীতির পরিবেশ তৈরি করা, সব মানুষের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা। মহানবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেন, ‘হজরত আনাস ও আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সব সৃষ্টি জগৎ আল্লাহর পরিবার (নির্ভরশীল)।

সুতরাং সৃষ্টি জগতের মধ্যে সেই আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয় যে আল্লাহর পরিবারের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করে (সহিহ বুখারি)। আর যেখানে গোটা সৃষ্টি জগতকেই আল্লাহর পরিবার তথা নির্ভরশীল বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে এবং সবার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করার কথা বলা হয়েছে- সেখানে ধর্মীয় বিদ্বেষের প্রশ্নই ওঠে না।